এমপিওভুক্তিকরণ

উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার সর্বাগ্রে ভূমিকা অনস্বীকার্য। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত হবেই। আর এই শিক্ষার পাদপীঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল পুরষ্কারের সমুদয় অর্থ শান্তি নিকেতনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন; তাই জাতি হিসেবে আমরা ভিন্নধর্মী। দেশের শিক্ষা বিকাশে অনুরাগ নাই বা থাকুক; কিন্তু রাগ কেন?

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিরল ঘটনা হিসেবে আলোচিত অনিবার্যকারন:বশত স্থগিত রাখা ননএমপিও বেসরকারি স্কুল/কলেজ এমপিওভুক্তিকরণ। আজ থেকে দীর্ঘ প্রায় ৮ (আট) বছর অতিবাহিত হতে চলছে বর্তমান সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তকরণ বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু কেন; বিষয়টি দেশের মানুষের বোধগম্য নয়। ফলশ্রুতিতে অভুক্ত অবস্থায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে ননএমপিও আট হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই আট হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৫ পনের বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিও পায়নি। এখন ১৫ বছর ধরে সরকারি অনুদান বা প্রতিষ্ঠানে অন্য কোন আয় ছাড়া একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলে? তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে এতদিন থাকলে বর্তমান এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত করুন। মুমূর্ষ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে এসব নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দশম জাতীয় সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৭তম বৈঠকে দেশে দীর্ঘদিনের ননএমপিও বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোকে এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু বিধিবাম, গত ২ জুন, ২০১৬-১৭ সালে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্ততায় নন-এমপিও বেসরকারী স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির কোন উল্লেখ নেই তথা এ বিষয়ে কোন বাজেট বরাদ্দ নেই মর্মে ব্যাপারটি সংসদে আলোচিত হয়ে পত্রিকায় আসে। আরো উল্লেখ্য ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের পদ্ধতিটা নাকি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর পছন্দ না। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বার বার এমপিওভুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যান। বঞ্চিত করেন দেশে শত শত প্রতিষ্ঠিত প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ দেশে শিক্ষা বিকাশে বাহক ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। শুধু এতুটুই বলব এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কিভাবে দিনাতিপাত করছেন তা মাননীয় অর্থমন্ত্রী স্বচক্ষে দেখলে এমনটি করতেন না।

গত ২০১৬ সালের ১১ মে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত দেশের ননএমপিও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকী এই ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবির সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সারা মাস জুড়ে দেশের প্রত্যঞ্চ গ্রাম-গঞ্জ থেকে এই নন-এমপিও শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির দাবী নিয়ে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সম্মুখে প্রায় একমাস (অনশন, মানববন্ধনসহ) নানা কর্মসূচী পালন করেন। এমপিওভুক্তির আশ্বাসের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির কোন খবর নেই। উপায়ন্তর না দেখে ননএমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা ২০১৬ সালের ১১ মে শহীদ মিনারে তাদের মহাসমাবেশ করেন এবং পরবর্তীতে লাগাতার কর্মসূচি করার ঘোষনা দেন। কি আশ্চর্য! শুনেছি শিক্ষকরা সবার উপরে; অথচ এই দেশে শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপকে কলুষিত করা হচ্ছে। বঞ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। কারন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণা, দান-দক্ষিনা আর স্থানীয় শিক্ষিত ব্যক্তিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম পর্যায়ে সরকারের কোন ভূমিকা ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হয়। সেজন্য সরকারি পক্ষ থেকে স্থানীয় এসব শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের ধন্যবাদসহ পুরস্কৃত করা উচিত। বরং তা না করে বেসরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও একযুগ পার হয়ে যায় সরকারি ভাতা তথা এমপিওভুক্তি করা হয় না। উপরন্তু এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে বসে তামাশা আর তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। এটাই আমাদের দেশ; সোনার বাংলাদেশ। রাজনীতি, প্রশাসন আর ক্ষমতা থাকলেই যথেষ্ঠ। আর অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।

এই হীনমন্যতায় অভুক্ত অবস্থায় অতিকষ্টে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। নিচিহৃ হওয়ার পথে দীর্ঘদিন আগের প্রতিষ্ঠা পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অতিকষ্টে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এলাকা ছেড়ে দুর-দুরান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। কেননা সরকারি অনুদান, শিক্ষার উপকরণ, শিক্ষকদের বেতন ছাড়া একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৪/১৫ বছর যাবত কিভাবে চলতে পারে? প্রশ্নটা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের কাছে? এরই মধ্যে আবার কিছদিন পর পর পত্রিকায় ওঠে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নতুন এমপিও নির্দেশিকা, নিয়ম, বিধিমালা। যেমন একটি ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে এতজন ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে। তাদের মধ্যে থেকে এত পারসেন পাশের হার থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। মাননীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আপনাদের বলছি- ১৫ বছর আগে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়ে এমপিও না পেলে বর্তমান সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষার্থী থাকবে এবং পাশের হার কেমন হবে? একটু বলবেন কি? সুতরাং আগে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ করুন এরপর শিক্ষা সংক্রান্ত যত নিয়ম আছে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করুন। কোন সমস্যা নেই; অতএব প্রতিষ্ঠান এমপিওকরণে আজ এক নিয়ম; আগামীকাল আরেক নিয়ম করবেন না।

আমরা অনেকেই মনে করি শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়াই নতুন এমপিওভুক্তির পথ রোধ করছে। আসলে কি তা ঠিক? দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী গত ৫ বছরে ব্যাংকিং এবং বেসরকারি খাত থেকে যত টাকা পাচার আর লোপাট হয়েছে- কোথায় কিছুই তো হলো না। এ পর্যন্ত পাচারকৃত এসব অর্থ উদ্বারে জাতীয় সংসদে কোন এমপি মন্ত্রী জোড়ালে বক্তব্য দিয়েছে বলে মনে হয়না। অথচ এসব পাচারকৃত অর্থের একটা সামান্য অংশ হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রতিষ